বর্তমান সময়ে আমরা সবাই ওয়াই-ফাই রাউটার ব্যবহার করে থাকি। বাসায় কিনবা অফিসে, ইন্টারনেট কানেকশনের জন্য ব্রডব্যান্ড ক্যাবলের পর, ওয়াই-ফাই রাউটারই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
বাজারে হাজার হাজার ব্র্যান্ডের ওয়াই-ফাই রাউটার পাওয়া যায়। সবই কি ভালো? কোনটা রেখে কোনটা কেনা উচিত?
এই সমস্ত প্রশ্নে জবাব, আজ এই ব্লগে আলোচনা করা হবে। তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক - ওয়াই-ফাই রাউটার কিনার ক্ষেত্রে যে সব টিপস আপনার কাজে লাগবে।
ওয়াই-ফাই রাউটার কি?
ওয়াই-ফাই রাউটার কেনার আগে জেনে নেওয়া ভালো যে ওয়াই-ফাই রাউটার বলতে কি বুঝায়।
ওয়াই-ফাই রাউটার একটি তারবিহীন (ওয়্যারলেস) যোগাযোগ ব্যবস্থা, যা ব্রডব্যান্ড ক্যাবলের থেকে ডাইরেক্ট কানেকশন নিয়ে সব ইন্টারনেট কমপ্যাটিবল ডিভাইসে ইন্টারনেটের যোগাযোগ ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়।
আপনারা অনেকে জেনে থাকবেন, এক সময় ছিল যখন টেলিফোনের লাইন দিয়ে কম্পিউটারে ইন্টারনেট ব্যবহার করা হতো। এই যোগাযোগের সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল- একটি ডিভাইসের বেশি ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া সম্ভব হতো না। ওয়াই-ফাই রাউটারের আবিষ্কার হয়েছে এই সমস্যারই সমাধানের জন্য। সেই জটিল সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে।
ওয়াই-ফাই রাউটার কিনার ক্ষেত্রে যে ৫টি টিপস আপনার কাজে লাগবে:
১. নেটওয়ার্ক কাভারেজ
ওয়াই-ফাই রাউটার কিনার ক্ষেত্রে সর্ব প্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হয় তা হলো, বড় নেটওয়ার্ক কাভারেজ এরিয়া। যে কোনো ওয়াই-ফাই রাউটারই যত দূরে যাবে, তার ইন্টারনেট স্পিড কমতে থাকবে।
এই তথ্যটি উপর ভিত্তি করে, আপনার পরিবেশ ও কানেকশন এরিয়া মাথায় রেখেই ওয়াই-ফাই রাউটার বাছাই করতে হবে। রাউটারের এন্টিনার পজিশন দুই রকম হয়ে থাকে: Horizontal আর Vertical। আপনার এরিয়া কাভারেজ যদি বড় হয়, সেই ক্ষেত্রে ৪টি এন্টিনা সহ ওয়াইফাই বক্স নিলে, ২টি Horizontal ও ২টি Vertical পজিশনে রাখলে ভালো সিগনাল পাওয়া সম্ভব।
Netgear 2 ও Tenda 4 সমান এরিয়া কাভারেজ দিয়ে থাকে। তাই 500 মিটার নেটওয়ার্ক কাভারেজ নিলে, আপনার ওয়াই-ফাই রাউটার বক্সটি রাখার জন্য এমন এটি জাগায় নির্ধারন করুন যা, আপনাকে ৪ দিকে সমান পরিমাণ কভারেজ দিবে।
২. রাউটার প্রসেসর
আমরা যারা হাই পারফরম্যান্স ও বেশি গ্রাফিক্স রেন্ডারিং কাজ করে থাকি যেমন: অনলাইন গেমিং, মিডিয়া ব্যাকআপ, অনলাইন সফটওয়্যার স্ট্রিমিং, ইত্যাদি। তাদের জন্য রাউটার প্রসেসর পাওয়ার এর উপর বিশেষ নজর দিতে হয়।
যদি আপনি হেভি ইউজার না হয়ে থাকেন তাইলে সিঙ্গেল কোর প্রসেসর সাথে 32mb ram আর হেভি ইউজের জন্য ডুয়াল কোর প্রসেসর সাথে 128mb ram রাউটার আপনাকে অনেক পাওয়ারফুল ব্যাকআপ দিবে।
স্বনামধন্য ব্র্যান্ড তাদের পণ্যের গায়ে ram এর পরিমাণ বর্ণনা করে থাকে। আপনি গ্যারান্টি নিয়ে থাকতে পারবেন যে, আপনাকে সত্যিই সেই প্রসেসর ram দেয়া হবে। অন্যদিকে কম দামী/ চাইনিজ রাউটারে কোথাও রাউটার প্রসেসর ও ram উল্লেখ্য করা থাকেনা। ফলে আপনি পিক পারফরম্যান্স পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবেন।
৩. 802.11 IEEE স্ট্যান্ডার্ড
IEEE হচ্ছে Institute of Electrical and Electronics Engineers। এই সংস্থার কর্তৃক নির্ধারিত স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে ওয়াই-ফাই রাউটার বানানো হয়ে থাকে।
বর্তমানে বাজারে IEEE 802.11 b/g/n এই মডেলের রাউটার গুলো বেশি দেখা যায়। বাসায় কিনবা অফিসে আপনি এই মডেলের রাউটার গুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
আমরা যারা একটু আপগ্রেড প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে পছন্দ করি, তাদের জন্য IEEE 802.11ac আর IEEE 802.11ax ভালো হবে। আপনার ইন্টারনেট কানেক্টেড ডিভাইসটি 5Ghz ডাটা ট্রান্সমিশন কমপ্যাটিবল হতে হবে, যদি আপনি IEEE 802.11ac 5Ghz বব্যবহার করতে চান।
৪. বাজার মূল্য
কম বাজেটের মধ্যে একটি ভালো পণ্য আমরা সবাই চেয়ে থাকি। বাজারে অনেক দামের ওয়াই-ফাই রাউটার পাওয়া যায়, 802.11 b/g/n ব্র্যান্ডের পণ্য আপনি তুলনমূলকভাবে কম দামে নিতে পারবেন। ১৫০০-২০০০ টাকার মধ্য আপনি সহজেই 802.11 b/g/n ব্র্যান্ডের রাউটার নিতে পারবেন।
যাদের বাজেট একটু ফ্লেক্সিবল, 802.11ac ব্র্যান্ডের রাউটার কিনতে গেলে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। অফিস কিনবা কোন বড় প্রতিষ্ঠানে যদি ওয়াই-ফাই সংযোগের প্রয়োজন পরে, তবে 802.11ax ৩৫,০০০-৪০,০০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
ফ্রিকোয়েন্সি ও কানেকশন রেঞ্জের উপর আপনার ওয়াই-ফাই রাউটারের মূল্য নির্ধারিত হয়ে থাকে। তাই আপনার যতটুকু প্রয়োজন, সেই হিসাবেই বাজেট সেট করে নেয়া ভালো।
৫. ব্যান্ডউইথ পারফরম্যান্স
সবশেষে আমাদের ওয়াই-ফাই রাউটারের ব্যান্ডউইথ পারফরম্যান্স নিয়ে কিছু জিনিস লক্ষ্য রাখতে হবে। ধরেন আপনি 10 mbps এর একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকশন নিয়েছেন। আপনি ও আপনার বন্ধু একসাথে সেই কানেকশন ব্যবহার করছেন। আপনি জুম অ্যাপ এ ক্লাস করছেন আর আপনার বন্ধু টরেন্ট থেকে মুভি ডাউনলোড করছে।
যার কারণে আপনি ঠিক মত ক্লাস করতে পারছেন না, ও একটু পর পর বাফার হচ্ছে। এই অবস্থায় আপনি যেটা করতে পারেন, টা হলো রাউটারে upstream/downstream লিমিট বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয়া।
ডিভাইস প্রেফারেন্স সেট করে দিলে, আপনি সহজেই ব্যান্ডউইথ পারফরম্যান্স কন্ট্রোল করতে পারবেন। তাই ওয়াই-ফাই রাউটার কিনার ক্ষেত্রে ব্যান্ডউইথ পারফরম্যান্স Manupulate করার সুবিধা আছে কিনা, তা জেনে নেয়া ভালো।
উপসংহার
ফার্স্ট কানেকশন ও নেটওয়ার্ক কাভারেজের সেবা পেতে ভালো মানের ওয়াই-ফাই রাউটারের বিকল্প নেই। একটি বিষয় খেয়াল রাখবেন- বড় ব্র্যান্ডের পণ্য যে সব সময় ভালো হয়ে, সেই আশা করা সম্পূর্ণ ভুল।
আপনার বাজেট ও প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে আশা করি “ওয়াই-ফাই রাউটার কিনার ক্ষেত্রে যে সব টিপস আপনার কাজে লাগবে” আর্টিকেলটি আপনার ওয়াই-ফাই রাউটার কিনার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।