আপনি কি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান? কেমন লাগবে যদি আপনি অনেক পরিশ্রম করে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত করেন, কিন্তু সাইবার আক্রমনের কারনে নিমেষেই সব নষ্ট হয়ে গেলো?
বেসিরভাগ উদ্যোক্তারা কিছু প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি না নেয়ার জন্য এরকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। চিন্তার কোন কারন নেই। আজ এই আর্টিকেলে আমরা এমন ৮ টি প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি টিপস শেয়ার করবো , যেগুলো প্রয়োগ করে আপনি হয়ে যাবেন একজন সুরক্ষিত এবং সফল উদক্তা।
চলুন দেখে নেই টিপসগুলো।
৮ টি প্রয়োজনীয় সাইবার সিকিউরিটি টিপস
সাইবার সিকিউরিটি টিপস আপনার ব্যবসার জন্য একটি সুরক্ষিত দুর্গের মত কাজ করবে।
1. শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন:
শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করা আপনার ডেটা এবং অ্যাকাউন্টগুলিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
- অন্তত 12 অক্ষরের পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
- বড় হাতের এবং ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং প্রতীক ব্যবহার করুন।বিভিন্ন ধরণের অক্ষর ব্যবহার করা পাসওয়ার্ডকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
- প্রতিটি অ্যাকাউন্টের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করলে আপনার সমস্ত অ্যাকাউন্ট ঝুঁকির মুখে পড়ে।
- সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড এড়িয়ে চলুন, যেমন আপনার নাম, জন্ম তারিখ, বা পোষা প্রাণীর নাম।
- পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করুন আপনার সমস্ত পাসওয়ার্ড ট্র্যাক করতে।
- আপনার পাসওয়ার্ড গোপন রাখুন এবং কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
উপরের টিপসগুলি অনুসরণ করে, আপনি অনুমান করা কঠিন এবং আপনার ডেটা সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করার জন্য শক্তিশালী পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন।
2. মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (MFA) ব্যবহার করুন:
ব্যবহারকারীদের তাদের পরিচয় যাচাই করার জন্য একাধিক প্রমাণ (factors) প্রদান করার প্রয়োজন হয়।সাইবার নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি কার্যকর পদ্ধতি হল মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (MFA)।
MFA আপনার অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত স্তরের সুরক্ষা যোগ করে।এটি একটি কোড ব্যবহার করে যা আপনার ফোনে পাঠানো হয়।যেখানে কেবলমাত্র একটি পাসওয়ার্ড প্রয়োজন হয়। এটি অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং এর ঝুঁকি হ্রাস করে।
MFA-এর ব্যবহার:
ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট:
Gmail, Facebook, Twitter ইত্যাদি।
অনলাইন লেনদেন:
ব্যাংকিং, কেনাকাটা ইত্যাদি।
MFA-এর কিছু উদাহরণ:
- Google Authenticator অ্যাপ ব্যবহার করে Gmail অ্যাকাউন্টের জন্য MFA সক্রিয় করা।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টের জন্য OTP ব্যবহার করা।
3. আপনার সফ্টওয়্যার আপডেট রাখুন:
সাইবার হুমকি থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য নিয়মিত সফ্টওয়্যার আপডেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার অপারেটিং সিস্টেম, অ্যাপ্লিকেশন এবং ব্রাউজারগুলি আপডেট রাখুন।
কোন সফ্টওয়্যার আপডেট করা উচিত:
- অপারেটিং সিস্টেম: Windows, macOS, Linux, Android, iOS ইত্যাদি।
- অ্যাপ্লিকেশন: Microsoft Office, Adobe Photoshop ইত্যাদি।
- ব্রাউজার:Google Chrome, Mozilla Firefox, Safari ইত্যাদি।
4. একটি অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করুন:
ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার আপনার ডিভাইস এবং ডেটার জন্য গুরুতর ঝুঁকি হতে পারে।এটি আপনার ডিভাইসকে ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার থেকে রক্ষা করবে।
একটি অ্যান্টিভাইরাস এবং অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে আপনি এই ঝুঁকিগুলি থেকে আপনার ডিভাইসকে রক্ষা করতে পারেন।
কিভাবে একটি অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম কাজ করে:
- ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যারের জন্য আপনার ডিভাইস স্ক্যান করে।
- সংক্রমিত ফাইলগুলিকে সরিয়ে ফেলে বা কোয়ারেন্টাইন করে।
- নতুন হুমকির বিরুদ্ধে আপনার ডিভাইসকে আপডেট রাখে।
কিছু জনপ্রিয় অ্যান্টিভাইরাস প্রোগ্রাম:
- Avast Free Antivirus
- AVG Free Antivirus
- Bitdefender Free Antivirus
- Kaspersky Security Cloud Free
5. আপনার ডেটা ব্যাক আপ করুন:
আপনার ডেটা নিয়মিত ব্যাক আপ করুন।এটি আপনার ডেটা হারিয়ে ফেলার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।
কেন ডেটা ব্যাক আপ করা গুরুত্বপূর্ণ:
হার্ডওয়্যার সমস্যা:
আপনার হার্ড ড্রাইভ বা অন্যান্য স্টোরেজ ডিভাইস ব্যর্থ হতে পারে এবং আপনার ডেটা হারিয়ে যেতে পারে।
ম্যালওয়্যার:
ভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার আপনার ডেটা দূষিত বা এনক্রিপ্ট করতে পারে।
মানবিক ত্রুটি:
আপনি দুর্ঘটনাক্রমে আপনার ডেটা মুছে ফেলতে পারেন।
কিভাবে ডেটা ব্যাক আপ করবেন:
স্থানীয় ব্যাক আপ:
আপনি একটি বাহ্যিক হার্ড ড্রাইভ বা ডিভাইসে আপনার ডেটা ব্যাক আপ করতে পারেন।
ক্লাউড ব্যাক আপ:
আপনি Google Drive, Dropbox, OneDrive ইত্যাদির মতো ক্লাউড স্টোরেজ গুলোতে আপনার ডেটা ব্যাক আপ করতে পারেন।
6. একটি ফায়ারওয়াল ব্যবহার করুন:
একটি ফায়ারওয়াল অননুমোদিত অ্যাক্সেস থেকে আপনার নেটওয়ার্ককে রক্ষা করে।
আপনার ফায়ারওয়াল কনফিগার করা আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।
কিভাবে একটি ফায়ারওয়াল কাজ করে:
আপনার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের মধ্যে একটি বাধা তৈরি করে।
অননুমোদিত ট্র্যাফিককে আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে বাধা দেয়।
আপনার ডেটা এবং গোপনীয়তা সুরক্ষিত রাখে।
কিছু জনপ্রিয় ফায়ারওয়াল:
-
Windows Defender Firewall
-
Norton Firewall
-
Comodo Firewall
7. সর্বজনীন Wi-Fi ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকুন:
সর্বজনীন Wi-Fi ব্যবহার করার সময় সংবেদনশীল তথ্য অ্যাক্সেস করা এড়িয়ে চলুন।একটি VPN ব্যবহার করুন যা আপনার ট্র্যাফিক এনক্রিপ্ট করে।সর্বজনীন Wi-Fi নেটওয়ার্ক ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এগুলি হ্যাকারদের জন্য সহজ লক্ষ্য হতে পারে।
একটি ব্যক্তিগত Wi-Fi হটস্পট ব্যবহার করুন,আপনি একটি মোবাইল হটস্পট ব্যবহার করতে পারেন যা আপনার ডিভাইসের জন্য একটি নিরাপদ Wi-Fi নেটওয়ার্ক তৈরি করে।
8. আপনার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিন:
আপনার কর্মীদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া আপনার ব্যবসাকে সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।কর্মীরা প্রায়শই সাইবার হামলার প্রথম লক্ষ্যবস্তু হয়।ফিশিং ইমেইল কর্মীদের বোকা বানাতে এবং তাদের ব্যক্তিগত তথ্য বা সংবেদনশীল ডেটা প্রকাশ করতে প্ররোচিত করতে ব্যবহার করা হয়।প্রশিক্ষিত কর্মীরা এই ধরনের আক্রমণগুলি সনাক্ত করতে এবং এড়াতে পারে।
বিভিন্ন ধরণের সাইবার হুমকি, যেমন ফিশিং, ম্যালওয়্যার এবং স্প্যাম সম্পর্কে কর্মীদের শেখান।
উপসংহার
তাহলে এখন তো জেনে গেলেন টিপসগুলি। আর দেরি না করে এখন থেকেই অনুসরণ করুন, আপনি আপনার ব্যবসাকে সাইবার হামলা থেকে রক্ষা করুন। মনে রাখবেন, আপনার ব্যাবসার নিরাপত্তা আপনার হাতেই!
আশা করি টিপস গুলো আপনার কাজে আসবে। কোন টিপসটি আপনার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় মনে হয়েছে? কমেন্ট করে জানাতে পারেন।