আমরা সবাই ফোনে কিংবা কম্পিউটারে ইন্টারনেট চালাতে গিয়ে ধীরগতি ইন্টারনেট স্পিডের বরাবর শিকার হয়েছি।
জরুরী কোন অনলাইন ইন্টারভিউ দেয়ার সময় কিনবা ফেসবুক/ ইউটিউবে কোনো ভিডিও দেখার সময়, হঠাৎ বাফারিং হলে ব্যবহারকারীর ইন্টারনেট চালানোর অভিজ্ঞতা অনেক তিক্ত হয়ে পরে।
তাই আজকে আমরা জেনে নিবো কিভাবে ১০টি সহজ ধাপে ওয়াই-ফাই স্পিড বাড়িয়ে নেয়া যায়। চলুন শুরু করা যাক-
১. ওয়াই-ফাই অ্যান্টেনার অবস্থান
আমাদের ওয়াই-ফাই রাউটারে অ্যান্টেনার অনেক সময় নড়ে যেতে পারে। এতে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে। রাউটারে অ্যান্টেনাকে অনুভূমিক রাখার চেষ্টা করুন, যদি আপনার নেটওয়ার্ক উপরে কিনবা নিচে সরবরাহ করা হয়।
অন্যদিকে একই তলায় সমান ভাবে নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দিতে চাইলে উলম্বভাবে অ্যান্টেনা গুলো সেট করে নিলে ভালো স্পিড পাওয়া যাবে। ঘরের মাঝ বরাবর ওয়াই-ফাই রাউটার রেখে অ্যান্টেনাগুলো সোজা রাখার চেষ্টা করুন।
২. ওয়াই-ফাই রাউটারের অবস্থান
ওয়াই-ফাই রাউটারে অ্যান্টেনার সাথে সাথে ওয়াই-ফাই রাউটারটি সঠিক অবস্থানে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। যে ঘরে রাউটারটি রয়েছে, সেই ঘরটি যদি পুরু দেয়াল বিশিষ্ট হয়, তবে ওয়াই-ফাই স্পিড অনেক অংশে কমে যায়। আবার রাউটারটি বেশি নিচে কোথাও রাখা-টাও ঠিক নয়।
চেষ্টা করুন রাউটারটি আসে পাশে তারবিহীন ডিভাইস কম রাখতে। এতে নেটওয়ার্ক চ্যানেলে ওভারল্যাপ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে, এবং ওয়াই-ফাই স্পিড ও অনেক অংশে বেড়ে যাবে।
৩. ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ড ডিভাইস
আপনার এরিয়া যদি বড় হয়। ভালো মানের ওয়াই-ফাই ও নেটওয়ার্ক কাভারেজ দিতে হিমশিম খাবে। ওয়াই-ফাই রিপিটার এই সমাধান করতে সাহায্য করবে।
এক্সটেন্ড ডিভাইসটি রাউটারের সিগনালকে পুনরাবৃত্তি করে। বাজারে আপনি ১০০০-২০০০ টাকার মধ্যে একটি ভালো মানের ওয়াই-ফাই এক্সটেন্ড ডিভাইস পেয়ে যাবেন।
৪. ব্যান্ডউইথ পারফরম্যান্স
ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথ পারফরম্যান্স ও বিশেষ ভাবে বিবেচনা করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ২.৪ এবং ৫ গিগাহার্টজ উভয় চালু রাখতে।
২.৪ নেটওয়ার্ক পরিসর বেশি হলেও, স্পিড কম থাকে। অন্য দিকে ৫ গিগাহার্টজ এ স্পিড বেশি, কভারেজ পরিসর কম। বাড়ি কিনবা অফিসে সব জায়গায় ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ পারফরম্যান্স সমান ভাবে থাকবে না।
তাই আপনার ইন্টারনেট সংযোগ নেয়া কোম্পানি থেকে আপনার পছন্দ অনুযায়ী ফ্রিকোয়েন্সি বেছে নেয়াই উত্তম।
৫. সফটওয়্যার আপডেট
আপনার ফোন ও কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমের সাথে সাথে ওয়াই-ফাই রাউটারের-ও বরাবরসফটওয়্যার আপডেট করুন। উৎপাদক কোম্পানী প্রায় সময় পর পর ওয়াই-ফাই রাউটার গুলোর সফটওয়্যার আপডেট করতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কারন বাগ প্যাচ করা থেকে শুরু করে ছোট খাটো ত্রুটি গুলোর সমস্যার সমাধান তারা এই সফটওয়্যার আপডেটের মাধ্যমে করে থাকে।
তাই সবশেষ ফার্মওয়্যারটি আপডেট করলে, আপনার ওয়াই-ফাই স্পিড অনেক দ্রুত কাজ করবে।
৬. একটি রাউটারে বাড়তি সংযোগ
আমরা অনেকেই কিছু খরচ কমানোর জন্য, একটি রাউটার দিয়ে বাড়তি ইন্টারনেট সংযোগ লাইন নিয়ে থাকি। স্বাভাবিক ভাবে এতে ওয়াই-ফাই স্পিড কমে যাবে।
আপনি যদি অল্প খরচে হাই-স্পীড ইন্টারনেট কানেকশন পেতে চান, তাহলে AmberIT ব্যবহার করুন। সাধ্যের মধ্যে ভালো ইন্টানেট প্যাকেজের সেবা তারাই দিয়ে থাকে। আপনার রাউটার দিয়ে বাড়তি ইন্টারনেট লাইনের সংযোগ নেয়ার প্রয়োজন পরবে না।
৭. ওয়াই-ফাই রাউটার রিস্টার্ট
ইন্টারনেট সংযোগ কাজ না করলে, ওয়াই-ফাই রাউটার রিস্টার্ট করার প্রক্রিয়া আপনার সবাই কম বেশি অবলম্বন করি। বিশেষজ্ঞরাও পরামর্শ দিয়েছেন, এই বিশেষ ট্রাবলশ্যুটিংটি করার জন্য।
অনেক সময়, একা ধরে একটি ডিভাইস চলতে থাকলে তার কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই মাসে একবার হলেও ৫-১০ মিনিটের জন্য ওয়াই-ফাই রাউটারটি বন্ধ করে, রিস্টার্ট ও রিবুট করুন।
৮. পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ
হ্যাকিং জগতে, নানা অনলাইন একাউন্টের পর, ওয়াই-ফাই লাইন সবচেয়ে বেশি হ্যাক করা হয়। দুর্বৃত্তরা আপনার ওয়াই-ফাই সংযোগটি নিয়ে, নিজেদের কাজে ব্যবহার করতে সক্ষম। ফলে ওয়াই-ফাই স্পীড অত্যাধিক কমে আসে।
এই সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে হলে, আপনার ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ডটি মাঝে মাঝেই পরিবর্তন করুন। পাসওয়ার্ড সেট করার সময় অবশ্যই, কঠিন ও অনন্য এক পাসওয়ার্ড বাছাই করুন। উদাহরণ: tiGerxii67, Blu€!007
৯. পুরনো ওয়াই-ফাই প্রোটোকল
IEEE 802.11b সংযোগ প্রাপ্ত রাউটার গুলোর ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক কাভারেজ অনেক কম থাকে। বর্তমান বাজারে IEEE 802.11x ওয়াই-ফাই রাউটার গুলো সবচেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন ও জনপ্রিয়।
বুঝার সুবিধার্তে, ওয়াই-ফাই রাউটার কেনার আগে ax←ac←n←g←b এই গতির প্রোটোকল গুলো বিবেচনা করুন।x প্রোটোকল আর ac প্রোটোকল গুলোর বাজার মূল্য খুব একটা সাশ্রয়ী নয়, কিন্তু সবচেয়ে বেশি আউটপুট দিবে, ও অনেক দিন চলবে।
বলে নেয়া ভালো, g প্রোটোকল ও b প্রোটোকল সম্পন্ন রাউটার গুলো সম্ভব হলে এড়িয়ে যাবেন, এদের ব্যান্ডউইথ পারফরম্যান্স তুলনামুলক কম থাকে।
১০. ট্র্যাফিক চ্যানেল রিডাইরেক্ট
কিছু কিছু ওয়েবসাইট রয়েছে যাদের ট্র্যাফিক উচ্চমাত্রা। বেশি ট্র্যাফিক সমপন্ন ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার ক্ষেত্রে, অ্যাপ স্টোর থেকে বিশেষ অ্যাপ ডাউনলোড করা নিতে পারেন।
যা আপনার ওয়েবসাইটকে রিডাইরেক্ট করে,ওয়াই-ফাই রাউটার ও চ্যানেল কে সংযুক্ত করবে। এতে আপনি অতি সহজে ওয়াই-ফাই স্পিড বাড়িয়ে নিতে পারবেন।
উপসংহার
ওয়াই-ফাই কানেকশন আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস গুলোর মধ্যে একটি। ধীরগতি ইন্টারনেট আর যেনো আমাদের অনলাইন কাজে পরাজিত না করতে পারে।
তাই আশা করি, ১০টি সহজ ধাপে ওয়াই-ফাই স্পিড বাড়িয়ে নেয়ার উপায় গুলো ব্যবহার করে আপনার ওয়াই-ফাই স্পিড আগের থেকে অনেক অংশে বেড়ে যাবে।